,

বানিয়াচংয়ে শিশু হত্যাকারীকে বাঁচাতে আপোষে রফাদফার চেষ্টা

আনোয়ার হোসেন :: বানিয়াচংয়ের এ এইচ এম কিন্ডার গার্টেন এর নার্সারীর ছাত্র শাহরিয়ার তানভীরকে মাইক্রোবাসের চাকায় পৃষ্ঠ করে হত্যাকারী ঘাতক চালক সাদ্দামকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি মহল। বিষয়টি অর্থের বিনিময়ে রফাদফার চেষ্ঠা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এই নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত চালকের শাস্তির দাবীতে সোচ্চার নিহতের সহপাঠী নিস্পাপ শিশুরা। আর এলাকাবাসী ও শিক্ষকবৃন্দের দাবী একটি নিস্পাপ শিশুকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে যদি ঘাতক চালক টাকার বিনিময়ে বেঁচে যায় তাহলে সমাজের অন্যান্য শিশুরাও নিরাপদ থাকবেনা। অপরদিকে অন্যান্য চালকরাও আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। নিহত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার তানভীরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরজমিনে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মন্ডলী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়। তাঁদের একটাই দাবী কোন আপোষ নয়। ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ রঞ্জন কুমার সামান্ত জানান নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয়নি। তিনি জানান সুরতহাল রিপোর্ট আসলে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দেয়া হবে। নিহতের মা শেখ সেবিনা আক্তার জানান আমি নির্বাক ও অসুস্থ। এলাকার গ্রাম্য মাতব্বরা বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তির প্রস্তাব দিয়েছিলেন শুনেছি। কিন্তু আমি চাই আমার একমাত্র শিশুপুত্র হত্যাকারী ঘাতক চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হোক। নিহতের মামা শেখ বাবুল মিয়া জানান আপোষ নিস্পত্তির কথা বলে সময় অতিবাহিত করা হচ্ছে। ঘাতক চালক দিব্বি ঘুরাফেরা করছে। নিস্পাপ শিশু হত্যাকারী চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক সেটি আমরা চাই। তিনি বলেন আর বিলম্ব নয় দ্রæত মামলা দায়ের করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য গত ৩০ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার দুপুরে গরীব হোসেন মহল্লা থেকে যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দিচ্ছিল চালক সাদ্দাম। এ সময় নিজ বিদ্যাপিঠ সংলগ্ন দোকানে বিস্কুট নিতে আসছিল শিশু তানভীর। জনবহুল গ্রামীন সড়ো পাকা রাস্তা দিয়ে দ্রæত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় মাইক্রোবাসের সামনের বাম্পারে আটকে পরে তানভীর। এ সময় যাত্রীরা গাড়ি থামিয়ে শিশুটিকে বাঁচানোর অনুরোধ করেন চালককে। কিন্তু চালক কারও কথায় কর্নপাত না করে গাড়ীতে জুলন্ত শিশুর দেহ পিচঢালাইয়ে পৃষ্ট করতে করতে আরো দ্রæত গতিতে প্রায় ৩ শত গজ দূরে যায়। সেখানে একটি রোড ডিভাইডারে ঝাকুনী খেয়ে তানভীরের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে লুটিয়ে পরলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় বানিয়াচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ওইখানেও শিশু তানভীরের চিকিৎসা করার মত কোন ব্যবস্থা না থাকায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া হয়। কিন্তু পথিমধ্যে শিশু তানভীর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় গরীব হোসেন মহল্লার শেখ তাহির মিয়ার কন্যার বিয়ে হয় দেওয়ান দিঘীর উত্তর পাড় মহল্লার আতাবুর মিয়ার সাথে। তাদের কোল জুড়ে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের সংসারে দেখা দেয় বিশৃংখলা। একপর্যায়ে পুত্রকে নিয়ে পিত্রালয়ে বসবাস শুরু করেন তানভীরের হতভাগিনী মা। তিনিই তাঁর পুত্রকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে দিনরাত সেলাইয়ের কাজ করে উপার্জন করে খাবার যোগানোর পাশাপাশি পাশর্^বর্তী এএইচএম কির্ডার গার্ডেনে পড়াশোনার জন্য ভর্তি করান। কিন্তু তার বুকবাঁধা স্বপ্ন নিমেষেই কেড়ে নেয় ঘাতক চালক সাদ্দাম। স্কুল থেকে ফিরে আসে কোমলমতি শিশু তানভীরের রক্তমাখা লাশ। ঘাতক চালক সাদ্দামের ফাঁসির দাবীতে পরদিন ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় স্থানীয় গরীব হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এলাকাবাসী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এতে অংশ গ্রহন করেন শত শত মানুষ।


     এই বিভাগের আরো খবর